Monday 28 May 2012

মাত্তামশাই, কুমীল!!!

এক মাস্টারমশাইয়ের এক ছাত্র ছিল। এটা কোনও গল্প নয়। অগন্য মাস্টারমশাইয়ের অগন্য ছাত্র থাকে। কিন্তু এই ছাত্রের বিশেষত্ব ছিল এই যে এ কোনও সাব্জেক্টেই পাঁচের বেশি নাম্বার পেতনা। মাস্টারমশাইয়ের লজ্জার শেষ নাই। ব্যাবসাদার বাবা। তিনিও ভাবেন, মাস্টারমশাইয়ের পেছন এত টাকা খরচ হচ্ছে আর রেজাল্টের বেলায় এই। অল ডেবিট, নো ক্রেডিট। একদিন তিনি ডেকে পাঠালেন মাস্টারমশাইকে। ভিতর থেকে বড় ডিশে করে ভালমন্দ খাবার-দাবারও এল। ছেলের বাবা বললেন ব্যাপারটা কি? মাস্টারমশাই বললেন, ব্যাপার আর কিছুই নয়, কুমীর। কুমীর? সে কি কথা ! হ্যাঁ স্যার। কুমীর। আপনি স্বকর্নেই শুনুন। শেখাইতো আমি সবই কিন্তু আপনার ছেলের কুমীরের জন্য সাধ্য কি যে স্কুলের মাস্টারেরা আপনার ছেলেকে নম্বর দেন। তা কি করে হয়? কুমীর নাহয় এক বিষয়ের নম্বর খেল। সব বিষয়ের নম্বর কিকরে খায় তা তো আমার সাধারন বুদ্ধির বাইরে। শুধু আপনার না স্যার, ব্যাপারটা যা দাঁড়িয়েছে তা সব মাস্টারমশাইদের অসাধারন বুদ্ধিরও বাইরে। শুনি, দেখি ছেলেকে কি পড়িয়েছেন? আপনি প্রশ্ন করুন আর ও আমার সামনেই জবাব দিক। ওর কুমীর মেরে তার চামড়া দিয়ে আমি গিন্নিকে একটা ব্যাগ বানিয়ে দিব। বলতো খোকন। আচ্ছা প্রথমে কঠিন প্রশ্ন নয়। প্রথমেই গরুর উপরে মুখে মুখে একটা রচনা বল। বাচ্চা ছেলেটি বললো, গলু? মাত্তারমশাই? হ্যাঁ বাবা গলু। ছাত্র গড়্গড় করে বলতে শুরু করলো, গলু একটি উপকালি জন্তু। গলুর দুধ আমলা থকলে কাই। গলুর দুধ দিয়ে থানা হয়, থন্দেত হয়, দই হয়। গলুর তামলা দিয়ে দুতো হয়, গলুর থিং দিয়ে কত্বো কিতু হয়। কিন্তু মাত্তামতাই। কি? বলো বলো। মাস্টারমশাই বললেন। থামলে কেন? বাবা বললেন, বলো খোকন, কি হল? একদিন না গলুতা বিতেল বেলায় বেলাতে বেলাতে একতা নদীল ধালে যেই না গিয়ে পৌছেছে, আর মাত্তামথাই...। চোখ ছানাবড়া করে বলল খোকন। আঃ বলই না... মাস্টারমশাই বিরক্ত হয়ে বললেন। মাত্তামথাই একতা কুমীল এথে না গলুতার পা কামলে ধলে এক্কেলে দলের তলায়...ও মাত্তামথাই ! গলু থেথ ! মাস্টারমশাই বললেন দেখলেনতো স্যার। গরু আরম্ভ হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল। যাকে নিয়ে নিবন্ধ তাকেই যদি কুমীর দিয়ে খাইয়ে দেয় গোড়াতেই তো মাস্টারমশাইরা কত নম্বর দিতে পারে বলুন? এটা কোন কথা নয়। এ অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সব বিষয়েই কুমীর আমার ছেলেকে খাচ্ছে...? আসলে স্কুল্গুলো সব গোল্লায় গেছে মশাই...পড়াশোনাই হয়না। নইলে একি মামদোবাজী পেয়েছেন? কুমীরের দোহাই পাড়ছেন সব সাব্জেক্টে আমার ছেলে ফেইল করার জন্য? আহা আমিতো প্রাইভেট। স্কুলেরতো নই। আমার উপর রাগ করেন কেন? তাহলে রাগ করব কার উপরে? কি বলেন স্যার আপনি? কুমীর আপনার ছেলেকে খাচ্ছে? না না, আপনার ছেলেকে কুমীর খাবে কেন, কুমীরতো... ঐ হল ! নেট ইফেক্টতো তাইই...প্রতি সাব্জেক্টে যদি ৩ ৪ করে পায় তো ঐ কুমীরেইতো খেল নাকি ছেলেকে? একটু থেমে মাস্টারমশাইকে বললেন, আচ্ছা রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আমার ছেলে কিছু জানে? বাঙ্গালীর ছেলেকে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে কিছু শেখাননি? আমার বিদ্যেবুদ্ধি অনুযায়ী যতটুকু জানি শিখিয়েছি স্যার। বলেই বললেন, বলতো বাবা রবি ঠাকুর সমন্ধে তুমি কি জান? লবি থাকুল মাত্তামথাই? ও, লবি থাকুল বকুব বালো কবি ছিলেন। টিনি গীতাঞ্জলী বলে একতা বই লিকে নোবেল প্লাইজ পেয়েছিলেন। উনি অনেক গানও লিকেথিলেন। থে গানের নাম লবীন্দথংগিত। কিন্তু মাত্তামথাই। একদিন না তিনি বেলাতে বেলাতে থিলাইদহর পদ্মার পাথে গেথেন, আল মাত্তামথাই! কি? আল কি! এত্তা কুমীল এথে তাঁর ঠ্যাং দলে তেনে নিয়ে তলে গেল - মাত্তামথাই। আকি জ্বালারে বাবা! ছেলের বাবা রীতিমত বিরক্ত হয়ে বললেন। সাহেব কবি-টবি সম্বন্ধে পড়িয়েছেন কিছু? এই কুমীরকে যদি সাহেব দিয়ে জব্দ করা যায়। হ্যাঁ। আপনি নিজেই জিজ্ঞেস করুন না এইবার। বল তো খোকন, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার কে ছিলেন? খোকন সঙ্গে সঙ্গে বলল : ' থেকথপিয়ার ইংল্যান্দের মহাকবি থিলেন। তিনি অনেক বই লিখেথিলেন, নাতোক, কবিতা আলো কত কি! তিনি জন্মেথিলেন ত্যাথফোর্ড অন আভোন এ। কিন্তু মাত্তামথাই ! কি? ওকদিন না তিনি তাল বালি থেকে বেলিয়ে আভোনের পাথা বেলাতে বেলাতে যেই গেছেন, সেই নদীতে অনেক হাঁথ ও ভাসথিল কিন্তু মাত্তামথাই একতা কুমীল, কি পাজি কুমীল, এত্যো বলো বলো ল্যাজ, হাঁথগুলোকে না ধলে থেকথপিয়ারের পা কামলে দলে আভোন নদীল মদ্দে এক্কেবালে মাত্তামথাই... ছেলের বাবা এবার অত্যন্ত চিন্তান্বিত গলায় বললেন, আরে। সত্যইতো তো মাস্টারমশাই। একে একি কুমীরের ব্যামোয় পেল বলুনতো দেখি ! জ্যোতিবাবুর ভাষায় এযে দেখছি 'গভীর চক্রান্ত'। কি আর বলব আমি ? শুধুই দেখি। মাস্টারমশাই অসহায় গলায় বললেন আচ্ছা, এবারে একটা ইতিহাসের প্রশ্ন করুনতো। দেখি কুমীর কিকরে ঢুকে হিস্ট্রীতে। প্রেজেন্ট টেন্সে ঠিক আছে পাস্ট টেন্সেতো ট্যাঁ-ফোঁ করবেনা। মাস্টারমশাই একটিপ নস্যি নিয়ে বললেন, ঢুকবে তাও ঢুকবে দেখবেন। অসীম ক্ষমতা আপনার ছেলের। এর কুমীর বেহুলা লক্ষীন্দরের বাসরঘরে ঢোকা সাপেরই মত। বড় সূক্ষ শরীর সে সর্বনাশার। তাকে আটকায় সে সাধ্য কারোর নেই। বাবাই বললেন এবারে, আচ্ছা বলতো খোকন তুমি শাজাহান সম্পর্কে কিছু জানো ? হ্যাঁ। জানি বাবা। কি জানো ? বল। থাদাহান খুব বলো নবাব থিলেন। দিল্লির নবাব। তাঁল বউএর নাম থিল মমতাহমহল। তিনি তাজমহল বানিয়েছিলেন একদিন...মাত্তামথাই...। কি ? কি হল ? একদিন থাদাহান দমুনা নদীল পাথে দালিয়ে দালিয়ে দমুনাল দলে তাল তলোয়াল পলিস্কাল কত্তিলেন আর অমনি...মাত্তামথাই ! ওমনি একতা কুমীল এথে থাদাহানের পা ধলে দলের নিচে...মাত্তামথাই। ছেলের বাবা exasperated হয়ে এবারে মাথায় হাত দিয়ে মাস্টারমশাইকে বললেন, মাটির উপরে তুলে দেখেছেন কখনও ?...মানে শুন্যে ? সেখানেও কি কুমীর ? হ্যাঁ স্যার তাও দেখেছি। সব জায়গায় কুমীর। সেকি ? না না। এ আপনার বাড়াবাড়ি। দাঁড়ান। আমিই প্রশ্ন করি। আচ্ছা খোকন, এরোপ্লেন সম্পর্কে তুমি কি জান বল। এরোপ্লেন দেখেছতো ? হ্যাঁ জানি। বলব ? হ্যাঁ খোকন বলতো। এলোপ্লেন আকাশের দাহাদ। আকাথে তলে। উলে উলে তলে। তার দুতো দানা আতে। অনেক মাল আর মানুথ তাল পেতের মধ্যে বথে থাতে। এলোপ্লেন দিনে ও লাতেও উলতে পারে। বাবা বললে, এইতো কেমন ফ্লুয়েন্টলি বলে যাচ্ছে, আপনারা না... হ্যাঁ খোকন বলো, তারপর ? একদিন এলোপ্লেনটা একতা নদীল উপল দিয়ে যেতে যেতে কালাপ হয়ে গিয়ে...মাত্তামথাই... নদীর নাম কি ? কঙ্গো নদী মাত্তামথাই। কুমীলে ভলা ! মাস্টারমশাই একটিপ নস্যি নিয়ে বললেন, ঐ দেখুন ! এরোপ্লেনও কি বাঁচবে ? মাত্তামথাই। এলোপ্লেনতা দেই দলে এসে পললো একতা কুমীল দুতো কুমীল অনেক কুমীল এসে আগে পাইলটদের আগে তাপ্পর...মাত্তামথাই...!

0 comments:

Post a Comment