(Direct/Torrent) Download Iron Sky 2012 DVDRip XviD Free

Iron Sky 2012 DVDRip XviD FILE INFO TiTLE.........[ Iron Sky AUDiO.........[ 48000Hz 128 kb/s LANGUAGE......[ English ViDEO.........[ 971 kbps XviD 25.000 FPS RESOLUTiON....[ 640 x 272 ASPECT RATiO..[ 2.35:1 SUBS..........[ English Hard-Coded When Needed FiLES.........[ 1 SiZE..........[ 1.36 GB RUNTIME.......[ 1:28:49

(3D Desktop Cube) ডেস্কটপকে দেখুন নতুনভাবে, একেবারে ত্রিডিতে। একই সাথে কাজ করুন অনেক উইন্ডোতে কিন্তু থাকুক পর্দার অগচরে।

অনেকে ডেস্কটপকে সুন্দর করে তোলার জন্য অনেক ধরনের থীম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু সেগুলো কম্পিউটারকে স্লো করে ফেলে। কিন্তু আজ আমি আপনাদের মাঝে এমন একটি সফটওয়্যার শেয়ার করব সেটা আপনার পিসিকে মোটেই স্লো করবে না। সফটওয়্যারটির সাইজ মাত্র ৫.৭৯ মেগাবাইট। সফটওয়্যারটা দেখতে যেমন অসাধারণ, কাজেও তেমনই অসাধারণ ।

(PhotoStage Slideshow Producer) ছবিকে করে ফেলুন ভিডিও চিত্র সঙ্গীতের মিশ্রনে।

আজ আপনাদের একটি দারুন জিনিষ উপহার দিবো। অনেকেই প্রশ্ন করেন খুব সহজে কিভাবে কিছু ছবিকে ভিডিওতে রুপান্তর করা যায়। হা বন্ধুরা তাদের জন্য নিয়ে এলাম PhotoStage Slideshow Producer নামের ছোট কিন্তু কাজের সফটওয়্যার।

Amazing Tree

Amazing Trees. Amazing Thinking of Social Bighead!

Read about a Tribe in America (পড়ুন আমেরিকার এক আজব জাতির কথা)

আজকে আপনাদের বলব প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা ১ নং দেশ, আমেরিকার কথা। বলব প্রযুক্তিক আমেরিকার এক অপ্রযুক্তিক আদিম এক গোষ্টির কথা। USA এর Pennsylvania এলাকার AMISH নামে এক গোষ্টি ১৬০০ সালে ইউরোপ থেকে USA তে আসে। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে ওরা এখনো সেই ১৬০০ সালেই রয়ে গেছে। ১৬০০ সালের সেই life style ধরে রেখেছে। জানি বিশ্বাস হচ্ছেনা। তাহলে পড়ুন...

Tuesday 17 May 2011

Producing System of Beggar(ভিক্ষুক বানানোর নিষ্ঠুর কারখানা)

রাজধানীর মাণ্ডায় পানির পাম্প এলাকার দুদু মিয়ার গলি ধরে পূর্ব দিকে ৩০ গজের মতো এগোলেই হাতের ডানে-বাঁয়ে বস্তির মতো ছয়-সাতটি ঘর। তবে ঘরগুলো সেমিপাকা। সাত্তার মিয়ার বাড়ি বললে সবাই চেনে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা। ঘরগুলোর একটি থেকে কাঠের হুইলচেয়ারে বসে বের হয়ে এলেন এক যুবক। চেয়ারটি পেছন থেকে ঠেলছে এক কিশোর। যুবকের বয়স ২৮-৩০ বছর। কিশোরের ১২ থেকে ১৪। প্রতিবন্ধী এবং ভিক্ষুক যুবকের দুই পা সরু লাঠির মতো। কিশোরটি কুঁজো। কিশোরকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে নাম-পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, তার নাম আলতাফ, বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। যুবক তার আপন বড় ভাই, নাম মোক্তার। তাদের বাবা প্রয়াত আলী হোসেন। অভাবের সংসারে ভাইকে নিয়ে সে ভিক্ষা করে।
এরপর কিশোরকে দূরে রেখে যুবকের কাছে তাঁর নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে ঘাবড়ে যান। পরে জানান, তাঁর নাম মোক্তার হোসেন। কিশোরটি তাঁর ছোট ভাই, নাম আলতাফ। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি এলাকায়। তাঁদের বাবার নাম সোলায়মান। তিনি আগে রিকশা চালাতেন, এখন অসুস্থ হয়ে বাড়িতেই থাকেন। মোক্তার আর আলতাফ মিলে ঢাকা থেকে টাকা পাঠায়। তাতে মা-বাবার সংসার কোনোমতে চলে।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত দুজনই স্বীকার করে তারা ভাই নয়, আত্মীয়ও নয়। দিনভর ভিক্ষা করে যা আয় হয়, রাতে ঘরে ফিরে তা দুজন সমান ভাগ করে নেয়। তা দিয়েই চলে খাওয়া, ঘরভাড়া, পোশাক ও নিত্যদিনের হাতখরচ এবং সরদারের 'সপ্তাহ'।
জানা গেল, সাত্তার মিয়ার সাতটি সেমিপাকা ঘর ছাড়াও এই এলাকায় ৮০টির মতো ঘরে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করে হাজারের ওপরে ভিক্ষুক। ঘরগুলো বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি থেকে শুরু করে
তিনতলা পাকা ভবন পর্যন্ত। ভিক্ষুকদের প্রায় সবাই পঙ্গু। যারা পঙ্গু না, তারাও বয়স আর অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আর রয়েছে শিশু। তাদের কারো কারো অবস্থা এতটাই করুণ যে, হঠাৎ করে দেখে বোঝার উপায় নেই সে জীবিত না মৃত।
এই ভিক্ষুকদের নিয়ে কয়েক দিন ধরে সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া গেছে নানা চাঞ্চল্যকর অজানা তথ্য। ভিক্ষুকদের একেকটি ঘর থেকে বের হয়ে আসা তথ্যচিত্রগুলো এমনই যে, কখনো শ্বাসরুদ্ধকর, কখনো বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠে, আবার কখনো চোখ ভিজে আসে। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা, আসাদুজ্জামান তপন ও মাসুদ রানা নামের দুই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদনটি। পুলিশের অনুরোধে অনুসন্ধানের দিন-তারিখ গোপন রাখা হলো। কারণ, পুলিশের কোনো অভিযানের সঙ্গে থেকে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়নি। বরং প্রতিবেদন তৈরিতে সাংবাদিককে সহযোগিতার জন্যই পুলিশ সদস্য সঙ্গে ছিলেন। ছিলেন র‌্যাব-পুলিশের কয়েকজন সোর্সও।
শনিবার, রাত দেড়টা। মাণ্ডায় রশিদ মিয়ার তিনতলা বাড়ি। নিচতলার একটি ঘরে বেশ কয়েকবার কড়া নাড়লে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেন এক নারী। বয়স ৩০-৩৫ বছরের মতো। চোখে-মুখে রাজ্যের বিরক্তি। কিন্তু পুলিশ দেখে চুপ। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, বাসায় তিনটি ঘর। একটি ঘরে মহিলা তাঁর স্বামীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘরে মশারি টানানো খাট, আলনা, ছোট কাঠের আলমারির ওপর ১৪ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন। মহিলা তাঁর নাম জানালেন আয়েশা আক্তার। তবে এলাকাবাসী তাঁকে হেলালের মা নামে চেনে। ততক্ষণে তাঁর স্বামীও ঘুম থেকে উঠে পুলিশ দেখে বাথরুমের ওপরে মালামাল রাখার জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে সেখান থেকে টেনে নামানো হলো। তাঁর নাম সালাম। নিজেকে রিকশাচালক দাবি করলেও সঙ্গে থাকা পুলিশের সোর্স রফিক জানান, তিনি আসলে ভিক্ষুকদের সরদার। পাশের একটি ঘর বাইরে থেকে তালা দেওয়া। অন্ধকার। ভেতরে কারো চাপা গলার স্বর শুনতে পেয়ে পুলিশের আদেশে তালা খুলে দেন আয়েশা। ভেতরে গিয়ে আলো জ্বেলে দেখা যায়, মেঝেতে বসে আছেন পাঁচজন বৃদ্ধা। কারো বয়সই ৮০ বছরের নিচে হবে না। জীর্ণ শরীরে শতছিন্ন নোংরা পোশাক। ঘরের মধ্যেই মলমূত্র ত্যাগ করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আয়েশা জানান, এই বৃদ্ধারা তাঁর ভাড়াটে। মাথায় গণ্ডগোল আছে। রাতে পালিয়ে যেতে পারে আশঙ্কায় ঘর বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়। বৃদ্ধারা তাঁর স্বামীর নিয়ন্ত্রণে থেকে ভিক্ষা করেন।



বৃদ্ধাদের মধ্যে একজন নিজেকে সম্ভবত শাহিদা নামে পরিচয় দিলেন। মুখে দাঁত নেই একটাও। অস্পষ্ট উচ্চারণের কারণে তাঁর কথা বোঝা কঠিন। বয়স ৯০-এর কম হবে না। বৃদ্ধা যা বললেন অনুমান করা যায়, তাঁর বাড়ি কোথায় মনে নেই। শুধু এটুকু মনে আছে, বাড়ি নদীতে ভেঙে গেছে। এখানে তাঁকে দিয়ে ভিক্ষা করানো হয়। কত টাকা পান, জানেন না। তবে তাঁর ধারণা, পরিমাণ কম হবে না। খুব ক্ষুধা লাগে, কিন্তু ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। খাবার চাইলে মারধর করা হয়। ছয়-সাত দিন পর গোসল করানো হয়। অসুস্থ হলে ওষুধ দেওয়া হয় না।
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে থাকা পুলিশের সোর্স রফিক ও আরেক বৃদ্ধা ভিক্ষুক জানান, সুস্থ থাকলে আয় কম হয়, পথচারীরা ভিক্ষা দিতে চায় না। তাই তাঁদের অসুস্থ করে রাখা হয়। খাবার দেওয়া হয় কম। রাতে ঘুমানোর জন্য বিছানা দেওয়া হয় না।
এই ভিক্ষুকদের যে বাসায় আটকে রাখা হয়েছে, সেই বাসার ভাড়াটে আয়েশা ও তাঁর স্বামী সালাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁদের বেশি খাবার দিলে মল-মূত্র দিয়ে ঘর নোংরা করে ফেলে। তাই কম খাবার দেওয়া হয়।
রাত আড়াইটা। পাশের আরেক বাড়ি। এটি বুলু মিয়ার বাড়ি নামে পরিচিত। মেস বা ছাত্রাবাসের মতো সারিবদ্ধ ১২টি ঘর। প্রতিটি ঘর আলাদাভাবে ভাড়া দেওয়া। সবটাতেই ভিক্ষুকরা থাকে। একটি ঘরে পাওয়া যায় ভিক্ষুকদের সরদার হিসেবে পরিচিত মোক্তারকে। মোক্তারের ঘরের বাথরুম বাইরে থেকে সিটকিনি দেওয়া। সেটা খুলতেই সবার চোখ ছানাবড়া। টয়লেটের প্যানে কার্টনের কাগজ বিছিয়ে বিছানার মতো করে তার ওপর হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে আছেন এক অশীতিপর বৃদ্ধা। দেখে বোঝার উপায় নেই, তিনি জেগে আছেন না ঘুমিয়ে আছেন। এত লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়েও সাড়া নেই বৃদ্ধার। তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনেক প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু প্রতিটি প্রশ্নের জবাবেই বৃদ্ধা মাথা না তুলে শুধু একটা কথাই বলতে থাকেন, 'বলব না, বলব না, ওরা মারবে।' বৃদ্ধা তাঁর নাম-পরিচয় কিছুই বলতে পারেন না।
মোক্তার আর তাঁর স্ত্রী কালের কণ্ঠকে জানান, এই বৃদ্ধাকে তাঁরা ২০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনেছেন। বিক্রেতা তাঁকে পথে কুড়িয়ে পেয়েছিল। এখন বৃদ্ধাকে দিয়ে তাঁরা ভিক্ষা করান।
অনুসন্ধান চালানো হয় দুদু মিয়ার গলি ও পাশের পুরনো গলির কমপক্ষে ১৫-১৬টি বাড়িতে। সবখানেই একই চিত্র। সবচেয়ে বেশি ভিক্ষুককে আটকে রাখা হয়েছে গলির বুলু মিয়া, সাজু মিয়া ও সদু মিয়ার বাড়িতে।
সদু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় ভিক্ষুক সুফিয়া বেগমের সঙ্গে। বয়স ষাটের কাছাকাছি। তাঁর পাশে বসা দুজন_শামসুন্নাহার, বয়স ত্রিশের মতো আর সুলতানা, কিশোরী বয়সী। সুফিয়া জানান, এরা তাঁর মেয়ে। তবে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ওরা কেউই বৃদ্ধার সন্তান না।
জানা গেল, বাড়ির মালিক সদু মিয়া সাংবাদিক টের পেয়েই পালিয়ে গেছেন।
সাজু মিয়ার বাড়ির একটি ঝুপড়িঘরে বিছানায় মৃতের মতো পড়ে থাকতে দেখা যায় এক বৃদ্ধাকে। জানা যায়, তাঁর নাম হামিদা বেগম। বয়স সত্তরের কাছাকাছি। তাঁর পাশে বসা আরেক মহিলা, নাম রহিমা। তাঁর ডান হাতের পাঁচটি আঙুলই কাটা। রহিমা বৃদ্ধাকে মা বলে পরিচয় দিতেই অনুসন্ধানে তা অসত্য প্রমাণিত হয়। জানা যায়, রহিমা নিজেই একজন ভিক্ষুক ব্যবসায়ী। হামিদাকে কিনে এনে তাঁকে দিয়ে ভিক্ষা করান তিনি। এ ব্যাপারে হামিদার সঙ্গে কথা বলতে গেলে রহিমা দৌড়ে পালিয়ে যান। পাঠিয়ে দেন বাড়ির মালিক সাজু-শ্যামলের মাকে। নাম জানতে চাইলে তিনি বললেন, সবাই তাঁকে শ্যামলের মা নামেই চেনে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁর ১০টি ঘর ভিক্ষুকদের ভাড়া দিয়েছেন। এদের কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি ভাড়া পাওয়া যায়। ঝামেলা করলে বিদায় করাও সহজ।
এই বাড়িতে আরো একটি ভিক্ষুক-পরিবার পাওয়া যায়। বৃদ্ধা সখিনা বিবি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। কথা বলতেও কষ্ট হয়। জানালেন, তাঁকে ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। খাবার চাইলে মারধর করা হয়। ক্রমে পঙ্গু হতে চলেছেন। চোখেও কম দেখেন।
রানী বেগম (সলুর মা) নামে এক ভিক্ষুক জানালেন, তিনি ভিক্ষা পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন ভিক্ষুক কিনে এনে ব্যবসা করেন। তাঁকে সবাই সরদার বলে জানে। এই এলাকায় এ রকম সরদার আছেন ৫০ জনের মতো। তাঁরা ভিক্ষুক কিনে এনে নিজের কাছে আটকে রেখে ভিক্ষা করান। এদের কোনো মাসোহারা দিতে হয় না। শুধু খাবার আর রাতে থাকার জায়গা দিলেই চলে। আবার কিছু ভিক্ষুক তাঁরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে পরিচালনা করেন কমিশনের ভিত্তিতে। বাড়িভাড়া, দেখভাল করা আর পুলিশ ধরে নিয়ে ভবঘুরে কেন্দ্রে পাঠালে ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব তাঁদের বা সরদারদের। এসব ভিক্ষুকের কাছ থেকে তারা সপ্তাহভিত্তিক টাকা পান। এই টাকাকে তাঁদের ভাষায় 'সাপ্তা' বলে।
রানী বেগমের কাছ থেকে জানা গেল, মানসিক রোগে আক্রান্ত (বিশেষ করে প্রতিবন্ধী) সারা দেশের পথহারা বৃদ্ধ মহিলা আর শিশু-কিশোরদের ধরে আনার একটি চক্র আছে। এই চক্র ওই বৃদ্ধা ও শিশুদের ধরে এনে তাঁদের কাছে বিক্রি করে। দাম ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। যে শিশু বা বৃদ্ধা যত বেশি অসুস্থ, তার দাম তত বেশি। কেনার পর তাঁরা এদের নিজের কাছে রেখে ঠিকমতো খাবার বা চিকিৎসা না দিয়ে আরো অসুস্থ করে তোলেন। এভাবে তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এভাবে শিশুদের অনেকে পঙ্গু হয়ে পড়ে। তবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কাউকে কেনা হয় না। ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা বৃদ্ধা ও শিশুদের চট্টগ্রামে আর চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা শিশু ও মহিলাদের ঢাকায় রাখা হয়। চট্টগ্রামেও এই ভিক্ষুক-ব্যবসায়ীদের একাধিক আস্তানা রয়েছে বলে রানী জানান।
রানীর কথার সূত্র ধরে হজরত নামে স্থানীয় এক প্রতিবাদী যুবককে নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হয় ওই এলাকায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুদু মিয়ার গলির (পুরনো গলি) বুলু মিয়ার বাড়িতেই এক বৃদ্ধাকে পাওয়া যায়। বুলু মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন ভিক্ষুক-ব্যবসায়ী নাসিমা। নাসিমা শুধু সরদারই নন, এই চক্রের নেত্রী হিসেবেও পরিচিত। তাঁর ঘরের মেঝেতে নির্জীব হয়ে পড়ে আছেন এক বৃদ্ধা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন। সাংবাদিক দেখেই দৌড়ে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে চিৎকার শুরু করেন নাসিমা। ডেকে আনেন এলাকার কয়েকজন ছিঁচকে সন্ত্রাসী ধরনের যুবককে। তারা এসে বাধা দেয় তথ্য সংগ্রহে। একপর্যায়ে যুবকরা হজরতকে ধরে মারধর শুরু করে। পরে এই প্রতিবেদক স্থানীয় কয়েকজনের সহযোগিতা নিয়ে হজরতকে উদ্ধার করে সেখান থেকে নিয়ে আসেন।
হজরত পরে টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, নাসিমা ছেলেধরা চক্রেরও নেত্রী। ওই রাতে মেঝেতে নির্যাতিতা যে বৃদ্ধ মহিলাকে দেখা গেছে, তাঁকে নাসিমা রাস্তা থেকে জোর করে ধরে এনেছে। সাংবাদিকদের সহযোগিতা করায় সোমবার রাতে আবারও নাসিমাসহ ওই সন্ত্রাসীরা বৃদ্ধাকে ধরে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রাতভর মারধর করেছে। পুলিশকে জানালে খুন করা হবে বলে হুমকি দিয়ে সকালে তাঁকে ছাড়া হয়।
বুলু মিয়ার বাড়ির দুই ঘরের ভাড়াটিয়া প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক ফিরোজ মিয়া ও রকিবুল জানান, এখানে সরদারচক্র আছে। যারা নিজেরা চলাচল করতে পারে না, তারাই সরদারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাঁদের জোর করে আটকে রেখে ভিক্ষা করানো হয়। তবে তাঁরা কোনো সরদারের নিয়ন্ত্রণে নেই বলে ফিরোজ ও রকিবুল জানান।
রাজিয়া বেগম নামের এক বৃদ্ধা জানান, তিনি তাঁর নাম-পরিচয়-ঠিকানা কিছুই বলতে পারেন না। তাঁকে সুফিয়া নামে যে মহিলা আটকে রেখে ভিক্ষা করায়, সে তাঁকে রাজিয়া বলেই সবার কাছে পরিচয় দেয়। আর এতেই তিনি ধরে নিয়েছেন, তাঁর নাম রাজিয়া।
রাজিয়ার এক পায়ের হাঁটুতে আর মাথার মাঝখানে দগদগে ঘা। মাথায় ক্ষতের চারপাশে চুল কেটে ফেলা হয়েছে, যাতে ঘা আরো স্পষ্ট হয়ে চোখে পড়ে। দেখেই বোঝা যায়, চিকিৎসা হয়নি। 'চিকিৎসা করাচ্ছেন না কেন' প্রশ্ন করলে রাজিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। অনেকবার জিজ্ঞেস করার পর রাজিয়া জানান, তাঁকে ওষুধ দেওয়া দূরে থাক, ঠিকমতো খাবারই দেওয়া হয় না। ব্যথায় ঘুমাতে পারেন না। রাস্তায় বসে যখন ভিক্ষা করেন, তখন মাছি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাথা ও পায়ের ঘা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সুফিয়া এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করে। পথচারীরা ঘা না দেখলে ভিক্ষা দেবে না বলে সুফিয়া তাঁকে জানিয়েছে। শুধু একটু খাবারের জন্যই তিনি সুফিয়ার কথা মেনে চলেন। কেউ জানতে চাইলে বলেন, সুফিয়া তাঁর মেয়ে। সুফিয়া অবশ্য তাঁকে মা বলেই ডাকে।
দুদু মিয়ার গলির উল্টোদিকে গ্যারেজ গলিতে একটি তিনতলা ভবনের নিচতলা। নিচতলা না বলে মাটির তলা বলাই ভালো। কারণ, এই নিচতলার ধরনই অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ড ভবনের বেজমেন্ট রুমের মতো। রশিদ মিয়ার ঘরে যাওয়া হয় রাত সাড়ে ৩টার দিকে। বিছানায় চার মাস বয়সের এক শিশু কোলে নিয়ে শুয়ে ছিলেন রশিদ ও তাঁর স্ত্রী। খাটের নিচে পুরনো কার্পেট ও কাপড় চাপা দেওয়া অবস্থায় ঘুমন্ত পাওয়া গেল পাঁচ-ছয় বছরের দুই শিশুকে। রশিদ জানান, শিশু দুটি তাঁরই সন্তান। 'সন্তান হলে ওদের এভাবে খাটের তলায় কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে কেন' জানতে চাইলে রশিদ জানান, খাটে জায়গা না হওয়ায় ওদের নিচে শুতে দেওয়া হয়েছে। আর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে মশা ও ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা করতে।
এই ভিক্ষুক ব্যবসায়ীচক্রকে ঘিরে এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক অপরাধচক্র। এ ধরনের কয়েকটি চক্রের দলনেতা হচ্ছেন দানব, ইয়ারু, নিয়ামত, সোহেল, জসিম, হায়দার, ভুট্টো, সুরুজ ও মাসুম। এঁদের কয়েকজন এলাকায় রিকশা গ্যারেজ মালিক হিসেবে পরিচিত। সোহেল, ভুট্টো ও হায়দার কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা কোনো দল বা চক্রের নেতা নন। তাঁদের রিকশায় করে এখান থেকে পঙ্গু ভিক্ষুকদের প্রতিদিন ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পেঁৗছে দেওয়া হয় এবং রাতে আবার নিয়ে আসা হয়। এর জন্য তাঁরা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছু বেশি ভাড়া পান। এর বাইরে এই ভিক্ষুক বা এদের নেতাদের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
হেলপ ফর হিউম্যান নামে একটি বেসরকারি সংগঠন গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই এলাকার ভিক্ষুকদের নিয়ে একটি জরিপ চালায়। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট নিগার সুলতানা কালের কণ্ঠকে জানান, মাণ্ডা এলাকায় ভিক্ষুকের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। এরা মাঝেমধ্যে বাসা পরিবর্তন করলেও মাণ্ডা এলাকাতেই থাকে। এখানে এদের কমপক্ষে ৩০ জন দলনেতা বা নেত্রী আছেন, যাঁরা সরদার নামে পরিচিত। বস্তি, স্টেশন বা রাস্তাঘাট থেকে অসহায় বৃদ্ধা আর শিশুদের প্রলোভন দেখিয়ে বা জোর করে ধরে এনে তাদের দিয়ে ভিক্ষা করানো হচ্ছে। এটা এক ধরনের ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা না দিয়ে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনাহারে রেখে কৌশলে এদের পঙ্গু বানানো হচ্ছে। তবে অবাক করার বিষয়, কারো বিরুদ্ধেই এদের কোনো অভিযোগ নেই। জোর করে ধরে আনার কথা এরা কেউ স্বীকারও করতে চায় না।
এ ব্যাপারে পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি এমনিতেই আইনে নিষিদ্ধ। এর পরও মানবিক নানা কারণে অনেক সময় ভিক্ষুকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে ওঠে না। তবে কাউকে জোর করে আটকে রেখে ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার করা বড় অপরাধ। মাণ্ডাসহ রাজধানীর অনেক এলাকাতেই ভিক্ষুকদের বসবাস আছে। তবে কারো বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় স্থানীয় থানা পুলিশের পক্ষে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে পুলিশ গোপনে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে বলে তিনি জানান।